ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ আস্সালামু আলাইকুম। ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টে আপনাদের স্বাগতম। ইফাতার টেবিলের অন্যতম একটি উপাদান হলো ছোলা। কোন কোন মানুষের তো ছোলা ছাড়া ইফাতারিই সম্পূর্ণ হয় না। মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপের সঙ্গে ছোলাভুনা মিশিয়ে না খেলে মনে হয়  ইফতারই ঠিক মতো হলো না। আজকের পোস্টে ছোলার উপকরিতা এবং ছোলার অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 
ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ছোলা শুধু রোজার মাসেই বেশি খাওয়া হয়। তবে এটি বেশ পুষ্টিকর ও গুণে ভরপুর। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতায় সারাবছরই আপনি খাদ্যতালিকায় ছোলা রাখতে পারেন।

সাধারণত ২ প্রকারের ছোলা পাওয়া যায়। একটি হলো দেশি ছোলা এবং অপরটি হলো কাবুলি ছোলা। দেশি ছোলা আকারে একটু ছোট, একটু কালচে রংয়ের এবং অপেক্ষাকৃত শক্ত। কাবুলি ছোলা অপেক্ষাকৃত একটু বড়, দেশি ছোলার চাইতে একটু নরম এবং উজ্বলতর-রং। ইফতারিতে আমরা যে ছোলা খাই তা মূলত দেশি ছোলা। কাবুলি ছোলা সাধারনত জন্মায় আফগানিস্তান, দক্ষিণ ইউরোপে।

ছোলার উপকারিতা ও অপকরিতা

cholar upokarita: সকলেই ছোলার পুষ্টিগুন সর্ম্পকে কমবেশি জানি। কিন্তু অনেকেই জানে না, ছোলা অনেক রোগ প্রতিরোধে উপযোগী একটি শস্য। প্রতি 100 গ্রাম ছোলায় প্রায় 17 গ্রাম প্রোটিন থাকে, কার্বোহাইড্রেট থাকে প্রায় 64 গ্রাম, ফ্যাট থাকে 5 গ্রাম। তাছাড়াও 200 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, ভিটামিন ‘এ’ থাকে প্রায় 192 মাইক্রোগ্রাম ও প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন বি-1 ও বি-2। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়ামও  রয়েছে। শরীরের জন্য এসব উপদান অনেক উপকারী।

ছোলার উপকারিতাঃ

১। শরীরের অস্থির ভাব ছোলা দূর করতে পারে। ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়ে যায়। এতএব হঠাৎ যদি দেহের মধ্যে অস্থির ভাব হয়, তাহলে খেয়ে নিতে পারেন ছোলা এবং নিশ্চই উপকার পাবেন।

২। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায় এবং অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো রোগের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

৩। ছোলাতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ২ ধরনের আঁশ রয়েছে। এই আঁশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়। 

ছোলার মধ্যে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনেরই খাদ্য আঁশ রয়েছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-6 হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এর ডাল আঁশসমৃদ্ধ যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন 4069 মিলিগ্রাম ছোলা খায়, হৃদরোগ থেকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি 49 শতাংশ কমে যায়।

৪। খাদ্যনালীর মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণু দূর করে ক্যান্সর হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে থাকে ছোলা। ছোলার শর্করা দ্রুত রক্তে যায় না। তাই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ছোলা খুবই উপকারী খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় রয়েছে 17 গ্রাম প্রোটিন, 68 গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং 5 গ্রাম ফ্যাট।

ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় 200 মিলিগ্রাম, লৌহ 10 মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ 190 মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি1, বি-2, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। বলতে গেলে এর সবই শরীরের উপকারে আসে।

৫। ছোলার ফ্যাট শরীরের জন্য একেবারেই ক্ষতিকারক নয়। বরং রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

৬। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে প্রোটিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়। এটা শক্তি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবান করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৭। হজম শক্তি ভালো থাকলে ছোলা অনেক কম সময়েই হজম হয়ে যাবে। আর ছোলার আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহয্য করে।

৮। ছোলা মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করতে পারে। এছাড়াও এতে ভিটামিন ‘বি’ও আছে যথেষ্ট পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ কমায় মেরুদণ্ডের ব্যথা এবং স্নায়ুর দুর্বলতা।

৯। ছোলা হতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি পাওয়া যায়। যা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তির জোগান দিয়ে থাকে।

১০। শুকনো ছোলাভাজা, শ্বাসনালিতে জমে থাকা পুরাতন কফ বা কাশি দুর করতে কাজ করে থাকে।

১১। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয় যে সকল অল্পবয়সী নারীরা বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়। যেহেতু ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে।

১২। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন ১/২ কাপ ছোলা, শিম এবং মটর খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় ।

১৩। গবেষণায় কোরিয়ান গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে, নারীরা বেশি পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড খাবারের সাথে গ্রহণের করে কোলন ক্যান্সার ও রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি হতে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেন।

১৫। ছোলাতে থাকা Folic Acid রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। আর তাই প্রতিদিন ছোলা খান এবং সুস্থ্য থাকুন।

১৬। ছোলা খেলে শরীরের অস্তির ভাব ও জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যায়। ছোলাতে থাকে সালফার নামক খাদ্য উপাদান। সালফার, মাথা গরম হয়ে যাওয়া ও হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে। সুতরাং যাদের হাতে পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব হয় তারা প্রতিদিন ছোলা খেতে পারেন।

ছোলার অপকারিতাঃ

১। কাঁচা ছোলার তেমন কোন অপকারিতা দিক নেই। তবে কিডনি রোগিদের ছোলা না খাওয়াই ভালো। ছোলা না ভেজে কাচা বা রান্না করে খাওয়াই বেশি ভালো। ছোলা দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি বিধায় সকলের নিয়মিয় ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন।

২। অতিরিক্ত তেল মসলা দিয়ে রান্না করে ছোলা না খাওয়াই ভালো। রোজা রেখে দীর্ঘক্ষন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর তেল মসলা কম খাওয়াই স্বাস্থ্যকর।

৩। কাচা ছোলা ভেজে না খাওয়াই ভালো। যাদের বুমির সমস্যা আছে তাদের কাচা ছোলা না খাওয়াই ভালো। 

৪। যাদের হজম শক্তি কম্ তারা ছোলা হজম করতে একটু সমস্যা হবে। তাই সকল দিক বিবেচনা করে খাওয়া উত্তম। 


আশা করি, ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্ট টি আপনাদের উপকারে এসেছে। কাঁচা ছোলা খাওয়ার পর যদি শরিরে কোন সমস্যা অনভুত হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছোলার উপকারিতা । ছোলার অপকারিতা । ছোলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম । ছোলা বুট খাওয়ার উপকারিতা ।
নবীনতর পূর্বতন