আজকালকার দিনে পরিবেশ দূষণ, বাইরে নিয়মিত চলাচল ও অতিরিক্ত কেমিক্যালের ব্যবহার সহ নানান কারণে ব্রণ হচ্ছে। উঁচু ঢিবির মতো ব্রণ দেখলেই যেন দু:খে চোখে পানি এসে যায়। কি দিব মুখে, কোন ক্রিম লাগাব ভেবে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তখন কেউ কেউ উল্টাপাল্টা ক্রিম লাগিয়ে ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দেয়! এরপর শরনাপন্ন হয় বিউটি পার্লারে। নিজের ব্যবসার কথা ভেবে তারা দেয় নানান রকম ট্রিটমেন্ট। এত টাকা জলে ফেলেও যেন ব্রণ দূর হয় না কিংবা ব্রণের দাগ থেকেই যায়।
কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি কেন ব্রণ হয়? কারণটা বের করতে পারলেই কিন্তু এত দৌড়াদৌড়ি করা লাগত না। নির্দিষ্ট কারণ জানলে ওটা করা থেকে বিরত থাকলে ব্রণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নেই ব্রণ কেন হয়, ব্রণ দূর করার উপায়। ব্রণ কেন হয় জানতে গেলে প্রথমে জানতে হবে ব্রণ কি? ব্রণ আসলে ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ যা এর তেল গ্রন্থি বন্ধ হয়ে গেলে দেখা দেয়।
ব্রণ হওয়ার কারণ কি?
তেলগ্রন্থি কার্যকলাপের ফলে এবং এ গ্রন্থি বন্ধ হওয়ায় ব্রণ হয়। ব্রণের মূল কারণ বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি।
১। বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের উঠানামাঃ হরমোনের তারতম্য ত্বকের তৈলগ্রন্থির ওপর প্রভাব ফেলে। অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে শরীরে বেশি হলে, ত্বকে থাকা সেবাম কোষগুলো বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এরপর উঁচু ঢিবির ত্বকে সৃষ্টি হতে পারে ব্রণের। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ খেলে উপকার পাওয়া যায়
২। তৈলাক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ রক্তে অতিরিক্ত শর্করা থাকার কারণে হতে পারে ব্রণ। আর তৈলাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে ব্রণ হতে পারে।
৩। মুখে অতিরিক্ত মেকআপ বা কসমেটিক ব্যবহারঃ বংশগত কিংবা পরিবেশগত কারণে অনেকক্ষেত্রে ব্রণ হয়ে থাকে। প্রচুর পানি পান করলে ব্রণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়
৪। ময়লা বালিশের কভারঃ লেগে থাকা ময়লা, ত্বকের তেল ও সিবাম মিলে মুখ বিশেষ করে থুতনিতে ব্রণ সৃষ্টি করে। তাছাড়া মেকআপের কসমেটিক বালিশের কভারে লেগে থাকতে পারে, যা মুখের সংস্পর্শে এসে ব্রণ হতে পারে
৫। ঔষধের সাইড ইফেক্টঃ মূলত propionibacterium acne নামের ব্যাকটেরিয়া টি ব্রণের জন্য দায়ী। এছাড়াও কিছু ওষুধ যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, কর্টিকোস্টেরয়েড, লিথিনাম গ্রহণে ত্বকে ব্রণ হতে পারে।
৬। মানসিক চাপঃ মানসিক চাপের কারণে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় শরীরে। ব্রণ ছাড়াও অকালে বয়সের ছাপ, বলিরেখা, অতিরিক্ত সিবাম নিঃসরণ ইত্যাদি হতে পারে
৭। মোবাইল ফোনের নোংরা স্ক্রিনঃ অনেক সময় মোবাইল ফোনে ধুলাবালি জীবাণু থাকলে তা হাত থেকে মুখে ছড়িয়ে ব্রণ হতে পারে
৮। ত্বক স্ক্রাবিংঃ ত্বকের তেল গ্রন্থি গুলোর মাঝে ইনফ্ল্যামেশন তৈরি করতে পারে অতিরিক্ত স্ক্রাবিং। একপর্যায়ে তেল গ্রন্থি বন্ধ হয়ে গেলে ব্রণ হতে পারে
৯। সানস্ক্রিন ক্রিম না লাগিয়ে রোদে বের হওয়াঃ রোদে ত্বক পুড়ে গেলে প্রদাহের পাশাপাশি ব্রণ দেখা দেয়৷ তাই সানস্ক্রিন ক্রিম অবশ্যই লাগানো উচিত।
মুখে ব্রণ কমানোর উপায়
- প্রচুর পানি পান করলে ব্রণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ।
- তৈলাক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা।
- মুখে অতিরিক্ত মেকআপ বা কসমেটিক ব্যবহার না করা।
- বালিশের কভার পরিষ্কার রাখা।
- ঔষধের সাইড ইফেক্ট হয় এমন ঔষধ খাওয়া কমানো, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
- মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা।
- মোবাইল ফোনের স্ক্রিন পরিস্কার রাখা।
- ত্বক স্ক্রাবিং এড়িয়ে চলুন।
- সানস্ক্রিন ক্রিম লাগিয়ে রোদে বের হওয়া।
- এগুলো মেনে চললে ব্রণ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। ব্রণ প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়
১। নিমপাতা মাস্ক নিম পাতা বেটে তার সাথে কাঁচা হলুদ মাখিয়ে আধা ঘণ্টা ব্রণের উপর লাগিয়ে নিন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন চারদিন ব্যবহার করলে ব্রণ চলে যাবে। কাঁচা হলুদ ব্রণের দাগ দূর করবে।
২। মুলতানি মাটি মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ব্রণ দাগ দূর করে উজ্জ্বলতা সৃষ্টি করে।
৩। কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো কাঁচা হলুদ গুড়া আর চন্দন কাঠের গুড়ি মিক্স করে সামান্য লেবুর রস দিয়ে ব্রণের উপর লাগালে ব্রণ দূর হতে পারে।
৪। শশার রস, চালের গুঁড়া ও মধু শশার রস, চালের গুড়া ও মধু একসাথে মিক্স করে মুখে ২০ মিনিট রাখলে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হবে।
৫। শুধু শশার রস প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে শশার রস দিয়ে মুখ ধুলে ত্বক ফ্রেশ, উজ্জ্বল ও ব্রণ দূর হবে।
৬। ২৪ ঘণ্টায় রাতারাতি ব্রণ দূর করার উপায় বরফঃ বরফ একটি কাপড়ে নিয়ে ২০ মিনিট করে চেপে ধরে রাখবেন ব্রণের উপর। এভাবে কতক্ষণ করলে ব্রণ চলে যাবে।
৭। ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশে থাকা অ্যামিনো এসিড ব্রণ দাগ দূর করে। ব্রণে লাগালে ব্রণ দূর হয়।
৮। লেবুর রসঃ লেবুর ভিটামিন সি ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণের দাগ দূর করে, ব্রণ মুক্ত ত্বক পাওয়া যায়। তবে এটি ব্যবহার করলে সানস্ক্রিন ক্রিম লাগিয়ে নিন।
আরও পড়ুন - কোন রোগের কি টেস্ট জেনে নিন